কপোত নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার পৌর এলাকার ইসলাম নগরে ছোট্ট একটি খুপড়ি বাড়ি। বাড়ির সাথে লাগানো একটি মুদি দোকান। সেখানেই এসএসসি পাশ করে টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ করে মায়ের সাথে কাজ করেন মোসলেমা খাতুন সুমেরা।
১৫ বছর আগে দিনমজুর পিতা আব্দুস সালামকে হারিয়ে মা সাকিরন বেগম ছোট ৩ সন্তানকে মানুষ করছেন অনেক কষ্টে। সুমেরার বড় বোন কে মা এসএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে বিয়ে দেন। একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া করাতে না পারলেও সুমেরাকে অন্যের বাড়ি কাজ করে লেখাপড়া করিয়েছেন।
কিন্তু বয়সের ভারে ও উদ্ধগতির এ বাজারে পরিবারে নুন আনতে পান্থা ফুরায় এর মত অবস্থায় ছোট মেয়েকে মা এসএসসি পাশ করাতে পারলেও টাকার অভাবে আর কলেজে ভর্তি করাতে পারেননি। ইতিমধ্যেই ভর্তির সময় পেরিয়ে গেছে। তাইতো বই পুরোপুরি বন্ধ করে মাকে সাহায্য করতে নানার দেয়া দোকানে কাজ করছেন সুমেরা।
সুমেরা এ প্রতিবেদককে পেয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, স্যার আমি আগের মত পড়তে চাই। আরও ভাল খেলতে চাই। আমার কি একটা ব্যবস্থা হবেনা? লকডাউনে মায়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্যারদের সহায়তা ও নানার দেয়া টাকায় লেখাপড়া করে এসএসসি তে ৩.৪৪ রেজাল্ট করি। তাই মেয়েটি আবারও স্বপ্ন দেখছেন হয়ত তার শিক্ষার পথ সুগম হবে।
সুমেরার মা সাকিরন বেগম বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর আমার দুই কন্যা সন্তান ও এক ছেলে থাকলেও বর্তমানে ছেলে নিজে আয় করতে আরম্ভ করার পর এবং নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ায় মা-বোনদের খোঁজ রাখেনা। স্বামী ১৩ বছর আগে মারা গেলে ছোট ৩ টি সন্তান নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকায় গাবতলায় স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে মায়ের বাড়িতে উঠি। শহরে মায়ের বাড়িতে থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ৩ সন্তানকেই শিক্ষিত করার চেষ্টা করি।
কিন্তু ছেলে মাদকাশক্ত হয়ে ভবঘুরে হয়ে সংসারে আরও বোঝা হয়ে যায়। এদিকে মা-বাবা না থাকায় ২ ভায়ের কষ্ট না বাড়িয়ে নানার দেশ রহনপুরে এসে নানার মুদির দোকানে কাজ আরম্ভ করি।কিন্তু ছোট মেয়ে সুমেরা ও নিজের ভোরন-পোষণ কীভাবে চালাবো কুল-কিনারা পাচ্ছি না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সরকারের দেওয়া বিনামূল্যে বই ও উপবৃত্তি টাকা পেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের লেখা-পড়া শেষ করতে পেরেছি। কিন্ত উচ্চশিক্ষা লাভে অর্থের যোগান কোথা থেকে আসবে কীভাবে আসবে, তাই মেয়েকে এইচএসসি তে ভর্তি করতে পারিনি।
সদ্য নবাবগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালষ থেকে পাশ করা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ জানান, মেধাবী ছাত্রী মুসলেমা খাতুন সুমেরা বাবার মৃত্যুর পর কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ে যে রেজাল্ট করেছে, সে অনুকূল পরিবেশ পেলে হয়ত জিপিএ-৫ পেত।
তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠান তার কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর কার্যালয়ে সাজিয়ে রাখা ক্রেষ্টগুলো দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তার অদম্য চেষ্টায় আমরা কাবাডি, ফুটবল সহ কয়েকটি খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সে একজন দক্ষ স্কাউট সদস্য ছিল। ক্রিকেটেও ছিল সে মেধাবী। তার মেধা ও পরিবারের আর্থিক সামর্থ্যের কথা বিবেচনা করে তাকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দেওয়া বা তার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
নয়তো তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার দিকে যেতে পারে। এ বিষয়ে গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমা খাতুন জানান, ইসলাম নগর গ্রামে মোসলিমা খাতুন সুমেরা নামে একজন মেয়ে অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারেনি বিষয়টি জানলাম। এ সময় তিনি কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়ারসহ সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
Leave a Reply