শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ পূর্বাহ্ন
ব্রেকিং
শিবগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিল্ক কর্মসূচির কার্যক্রম পরিদর্শন করলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাঁপাইনবাবগঞ্জে হুজরাপুর-ফায়ার সার্ভিস মোড় পর্যন্ত রাস্তার কাজের উদ্বোধন পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত নামাজরত নারীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা রাজশাহীতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও অস্ত্র উদ্ধার নাচোলে ধানখেতের পাকা নালায় পাওয়া গেলো আ:লীগ নেতার মরদেহ ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪ জন আটক ১ লাখ ডলার দাম ছাড়িয়ে গেলো বিটকয়েন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থায় : টিআইবি রাজশাহীতে বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন গৃহবধূ

দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ তিন বিষয় দেখবে কে

  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

অনলাইন ডেস্ক : যানবাহন চালাতে চালকের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক; যানবাহনের ফিটনেস এবং রুট পারমিট এই তিনটি বিষয় নিশ্চিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে। বিষয়গুলো প্রতিপালন না হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এসব দেখার দায়িত্ব যে প্রতিষ্ঠানের সেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অনেকটাই ব্যর্থ। আর এই সুযোগটি নিচ্ছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। তারা সড়কে ইচ্ছামতো পরিবহন পরিচালনা করছেন। হালকা যানের লাইসেন্স নিয়ে চালানো হচ্ছে ভারী গাড়ি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স না থাকারও প্রমাণ মিলছে দুর্ঘটনার পর।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিরাপদ সড়কের জন্য এই তিনটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। অথচ তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। দেখারও কেউ নেই। মাত্র ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে বিআরটিএ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে চলতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে মৌলিক গবেষণায় নিয়োজিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, আনফিট যানবাহনের কারণে দেশে ২০-৩০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। উপযুক্ত লাইসেন্স না থাকায় অনুমান ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তবে দূরপাল্লার বাসে রুট পারমিটের জটিলতা কম। রাজধানীতে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি।

বিআরটিএর নিয়ম অনুযায়ী বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ চার ধরনের ভারী যানবাহন রয়েছে। এসব যানবাহন চালাতে ভারী ড্রাইভিং সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। মূলত দক্ষ চালকের হাতেই এই লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়। সারা দেশে এখন ভারী যানবাহনের সংখ্যা আড়াই লাখ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এমন লাইসেন্স বিতরণ হয়েছে ১ লাখ। অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ চালক উপযুক্ত লাইসেন্স ছাড়াই ভারী যানবাহন চালাচ্ছেন।

যাত্রীবাহী যানের রুট পারমিট নির্দিষ্ট থাকলেও পণ্যবাহী বা ভারী যানবাহন সারা দেশে অবাধে চলতে পারে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে ভারী যানবাহন অনেকাংশেই দায়ী। এআরআই বলছে, প্রায় ৫০ ভাগ ভারী যানবাহনের চালক প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। গত ১৫ বছরের হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ৪৪ ভাগ ভারী যানবাহন প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। সড়ক দুর্ঘটনায় পথচারী মৃত্যুর ৫৯ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ভারী যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার ঘটনা।

জানতে চাইলে এআরআইর সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান কালবেলাকে বলেন, আনফিট যানবাহনের চালক সব সময় আনফিট হবে এটাই স্বাভাবিক। যে যানের রুট পারমিট নেই; ফিটনেস নেই, সেই যানটি তো পেশাদার চালক চালাবেন না। অপেশাদার চালক মানেই তো বেপরোয়া। যে কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবকটি দুর্ঘটনায় রুট পারমিট না থাকা, চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের ফিটনেসসহ গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি পাওয়া গেছে। মূলত দেখভালের অভাবেই এসব ত্রুটি থেকে যায়। এতে পথে মৃত্যু বাড়ছে।

বিআরটিএ হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে সোয়া ছয় লাখ যানবাহনের ফিটনেস সদন নেই। এর মধ্যে কিছু যানবাহন হালনাগাদ ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেনি। কিছু যানবাহন দীর্ঘদিন ধরেই ফিটনেস সার্টিফিকেট নিচ্ছে না। এর বাইরে যানবাহনের তুলনায় ১৫ লাখের বেশি চালক সংকটে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব যানবাহনের কোনোটিই বসে নেই। সব চলছে। এতে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়ে চলেছে। এ ব্যাপারে বিআরটিএ চেয়াম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার কালবেলাকে বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যানবাহনগুলো আইন বা নিয়ম মেনে চলছে কি না, তা দেখভালের জন্য লোকবল খুবই কম। আমরা তো স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করি। লোকবল সংকটের সুযোগ নিয়ে আনফিট, লাইসেন্স বা রুট পারমিট ছাড়া যানবাহন চলাচল করছে। এ জন্য আমরা সারা দেশে একযোগে অভিযান পরিচালনা করছি।

গত ২০ এপ্রিল শুক্রবার ছুটির দিনে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের দেয়াল ভেঙে রাইদা পরিবহনের বেপরোয়া একটি বাস ভেতরে ঢুকে যায়। এতে একজন প্রকৌশলী মারা যান। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাইদা পরিবহনের বাসটির ফিটনেস নেই। ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর পর আর ফিটনেস করানো হয়নি। এ ছাড়া ট্যাক্স, টোকেন ও রুট পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের নভেম্বরে। রাইদা পরিবহনের বাস পোস্তগোলা থেকে উত্তরা খালপাড় পর্যন্ত চলাচল করে।

এর আগে গত ১৪ এপ্রিল ফরিদপুরের কানাইপুরের ইউনিক পরিবহনের একটি বাস যাত্রীসহ একটি পিকআপকে চাপা দেয়। এতে পিকআপের ১৪ জনের মৃত্যু হয়। পরে জানা গেছে, বাসটির ফিটনেস ছাড়পত্র ও ট্যাক্স টোকেন কোনো কিছুই ছিল না। এমনকি যে সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, সেই রুটে চলাচলের অনুমোদনও ছিল না। এর তিন দিন পর ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির গাবখানে একটি ট্রাকের চাপায় অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের ১৪ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পরে জানা যায়, ধাক্কা দেওয়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না।

যানবাহনের ফিটনেসসহ সার্বিক বিষয় দেখভাল করে বিআরটিএর সড়ক নিরাপত্তা বিভাগ। এই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী। সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার প্রশ্নে তিনি কালবেলাকে বলেন, এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সারা দেশে অবৈধ যানবাহন চলছে অবাধে। এসব দেখভালের দায়িত্ব তো বিআরটিএর একার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রয়েছে। সবাই মিলে কাজ করতে হবে। একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করলে সংকট সমাধান হবে না।

জানতে চাইলে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ভারী যানবাহনের কারণে প্রায় তিন ভাগ দুর্ঘটনা হচ্ছে। এর মধ্যে ঈদযাত্রায় দেখা গেছে ট্রাক-পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও লরির কারণে ১৪ ভাগ ও বাসের কারণে বাকি ১৪ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে।

নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে কালবেলাকে বলেন, আনফিট গাড়ি, চালকের উপযুক্ত লাইসেন্স না থাকা ও রুট পারমিট না থাকায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের ছিল, তাদের জবাবদিহি বা আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। এ কাজটি করা সম্ভব হলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যেত।

কালবেলা/এআরও

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও সংবাদ
স্বত্ব ©2022-2024 চাঁপাই এক্সপ্রেস.কম
Design By Raytahost
raytahost14