রাজশাহী : রাজশাহীতে নিজের মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় বাবাকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে নগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মো. রুমেল (২৫)। তিনি মামলার প্রধান আসামি মো. নান্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাক আহমেদ। তিনি আরও জানান, রুমেল এজাহারভুক্ত না হলেও, তদন্তে তাঁর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও একটি মামলা রয়েছে।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
গত বুধবার রাতে রাজশাহীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম আলী (৫২) ও তাঁর ছেলে ইমাম হাসান হামলার শিকার হন। মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তাঁদের ওপর এ হামলা চালানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় আকরামকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। আকরাম ছিলেন পেশাদার বাসচালক ও রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য।
নিহতের মেয়ে রাফিয়া আলফি চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। বাবার মৃত্যুর পরদিন, বৃহস্পতিবার, তিনি কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষায় অংশ নেন।
নিহতের ছেলে হাসান ইমাম বৃহস্পতিবার দুপুরে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরও চার-পাঁচজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার মো. নান্টু (২৮), মো. বিশাল (২৮), খোকন মিয়া (২৮), তাসিন হোসেন (২৫), মো. অমি (২০), মো. নাহিদ (২৫) ও মো. শিশির (২০)।
উত্ত্যক্ততা থেকে হত্যাকাণ্ড
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কিছুদিন আগে প্রধান আসামি নান্টু তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেন। নান্টুর স্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় আকরাম আলীর স্ত্রী এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নান্টু তাঁর পরিবারকে ক্ষতির হুমকি দেন এবং তাঁর লোকজন দিয়ে আকরামের মেয়ে রাফিয়াকে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন।
বুধবার রাতে নান্টু নিজেই রাফিয়াকে গালিগালাজ করে। এ নিয়ে আকরাম প্রতিবাদ জানাতে নান্টুর পরিবারের কাছে গেলে তারা বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে উল্টো হামলার ঘটনা ঘটায়। রাত ১০টার দিকে তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় আকরাম ও তাঁর ছেলেকে ইট দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করা হয়।
বাবার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রাফিয়া বলেন, “আমি প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন নান্টু ও তাঁর লোকজন আমাকে গালি দেয়। বাসায় গিয়ে বাবাকে বলি, তিনি প্রতিবাদ করতে যান। কিন্তু নান্টুর পরিবার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাকে লেলিয়ে দেয়। এর ফলেই বাবাকে হত্যা করা হয়। আমি বাবাকে হারিয়েছি- এই কষ্ট আমি কোনোদিন ভুলতে পারব না। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।”
চাঁপাই এক্সপ্রেস/এএকে
Leave a Reply